ফাইনালে পাকিস্তান

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সপ্তাহখানেক আগে পাকিস্তানের বাজির রেট ছিল সবার নিচে। খোদ পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহাম্মেদও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের আন্ডারডগ হিসেবে আখ্যা দেখছিলেন। সাবেকদেরও আস্থা ছিল না এই দলটির উপর। আর তারাই কিনা টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ফেভারিট দলটিকে দুমড়ে মুচড়ে চলে গেল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও গতকাল ঘটনাটি ঘটেছে কার্ডিফে। পেসাদের কল্যাণে প্রথমে উড়তে থাকা ইংল্যান্ডকে মাটিতে নামিয়ে আনে পাকিস্তান। হাসান আলী, পেসার জুনাইদ খান ও রুম্মন রইসের মারত্মক বোলিংয়ে রুট, মরগান, বেন স্টোকসদের দাপুটে ব্যাটিং গুটিয়ে যায় ২১১ রানে। জবাবে ফাখর জামান, আজহার আলীর দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৮ উইকেট জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পাকিস্তান। ১৯৯৯ সালের প্রথম আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে ফাইনালে উঠলো ১৯৯২ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এখন কে হবে ফাইনালে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ না ভারত? এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে বার্মিংহামে, যেখানে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে এশিয়ার এ দুই দল।
গ্রুপপর্বে দুর্দান্ত খেলেছে ইংল্যান্ড। ঘরের মাঠের বাড়তি সুবিধা আদায় করে তিন ম্যাচের তিনটিতে জিতেই সেমিফাইনালের টিকিট পায় তারা। শেষ চারের লড়াইয়ে গতকাল কার্ডিফে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছে ইংল্যান্ড। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে সুবিধা করতে পারেননি ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। পাকিস্তানি বোলারদের তোপে নির্ধারিত ৫০ ওভারই ব্যাট করতে পারেনি। ৪৯.৫ ওভারে ২১১ রানে অলআউট ইয়ন মরগান বাহিনী। বোলিংটাও ভালো হয়নি ইংল্যান্ডের। পাকিস্তানের দুই ওপেনার ফাখর জামান ও আজহার আলি তুলোধুনো করে ছেড়েছেন ইংলিশ বোলারদের। উদ্বোধনী জুটি টিকেছিল ২১তম ওভার পর্যন্ত। ফাখর জামান ও আজহার আলি মিলে ১১৮ রান যোগ করেন পাকিস্তানের স্কোরশিটে। পাকিস্তানের দুই ওপেনারই পেয়েছেন ফিফটির দেখা। আদিল রশিদের বলে জস বাটলারের হাতে ক্যাচ দেয়ার আগে ফাখর জামান করেছেন ৫৭ রান। তার ৫৮ বলের ইনিংসটি সমৃদ্ধ ৭টি চার ও একটি ছক্কায়। দ্বিতীয় উইকেটে বাবার আজমকে সঙ্গে নিয়ে ৫৭ রানের জুটি গড়েন আজহার। দলীয় ১৭৩ রানে ব্যক্তিগত ৭৬ রানে বলে’র বলে বোল্ডহন আজহার আলী। শেষদিকে মোহাম্মদ হাফিজকে সঙ্গে নিয়ে ৩৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ১১ ওভার বাকি থাকতে আট উইকেটের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন বাবর আজম। হাফিজ অরাজিত থাকেন ৩১ রানে।
ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি ব্যতিক্রম, এরপর থেকেই এবার তাদের বারবার ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন বোলাররা। দক্ষিণ আফ্রিকার পর শ্রীলঙ্কা। গতকাল তা-ই হলো। পাকিস্তানের বিপক্ষে দলীয় ৩৪ রানে ওপেনিং জুটি ভাঙে ইংল্যান্ডের। আসরে তিন ম্যাচেই জয় কুড়ানো একমাত্র দল ইংল্যান্ড। তবে গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচসহ ওপেনিং জুটিতে তাদের সংগ্রহ যথাক্রমে ৬, ৩৭, ৪ ও ৩৪ ।  রুম্মন রইসের আগের ওভারেই রিভিউ নিয়ে এলবিডব্লিউ থেকে বেঁচে যান অ্যালেক্স হেলস। তবে পরে রুম্মন রইসের বলেই ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন এ ইংলিশ ওপেনার। মলিন ফর্মের ওপেনার জেসন রয়ের জায়গায় গতকাল ইংল্যান্ড একাদশে সুযোগ নেন জনি বেয়ারস্টো। তবে ব্যাট হাতে বড় ইনিংসের  প্রতিশ্রুতি জাগিয়েও ব্যক্তিগত ৪৩ রানে উইকেট খোয়ান তিনি। ইনফর্ম দুই ব্যাটসম্যান জো রুট ও অধিনায়ক এউইন মরগানের ব্যাটে ভরসা ছিল ইংলিশদের। তবে ৪৮ রানের জুটি গড়ে বিদায় নেন জো রুট। ৩৩ রানের ইনিংস খেলেন অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। আর ইংল্যান্ডের লেজের চার ব্যাটসম্যানই সাজঘরে ফেলেন ব্যক্তিগত এক অঙ্কের রানে। ইনিংসের মাঝপথে মাত্র ৩৪ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে পথ হারিয়েছে তারা। ২ উইকেটে ১২৮ থেকে মুহূর্তেই স্কোর হয়েছে ১৬২/৬! সপ্তম উইকেটের পতন হয়েছে ১৮১ রানে। আর দুইশ’ পেরোনোর পর ফিরে গেছেন একমাত্র ভরসা স্টোকস। এই অলরাউন্ডার নিজেও খুব স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। কোনো চার-ছয় নেই, ৬৪ বলে ৩৪ রান করেছেন স্টোকস। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অমন এক সেঞ্চুরির পর এমন ভগ্ন ইনিংস! বোঝাই যায়, কেমন দুর্দান্ত বোলিং করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের সব বোলারের ইকোনমি রেট পাঁচের নিচে! গতকাল শুরু থেকেই দ্রুতগতিতে রান তুলতে পারেনি ইংল্যান্ড। ৩০ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের স্কোর ছিল ১৩৬ রান। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর গত দুই বছরে ৩০ ওভারে এর চেয়ে কম স্কোর মাত্র দুবার করেছে ইংল্যান্ড। তবে জস বাটলার, বেন স্টোকস কিংবা এউইন মরগানের মতো খেলোয়াড়রা সেটা পুষিয়ে দেবেন বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু ৭ উইকেট হাতে নিয়েও শেষ ২০ ওভারে মাত্র ৭৫ রান করেছে ইংল্যান্ড! কার্ডিফে ইংলিশদের বিপক্ষে ৭ উইকেট ভাগাভাগি করেন পাকিস্তানি পেসার ত্রয়ী হাসান আলী-জুনাইদ খান-রুম্মন রইস। আর রানআউটে কাটা পড়ে ইংল্যান্ডের দুই উইকেট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের ম্যাচে ১০ উইকেট নেন পাকিস্তানের পেসাররা।  গতকাল পাকিস্তানের বল হাতে পেসার হাসান আলী তিন ও অপর পেসার জুনাইদ খান ও রুম্মন রইস নেন দুটি করে উইকেট।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর